১৩ হাজার পাঁচজনকে প্রশিক্ষণ দেবে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি (বিএসিআই)। স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট (সেপ) প্রকল্পের অধীনে বিনা মূল্যে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন রায়হান আহমদ আশরাফী, ছবি তুলেছেন নাভিদ ইশতিয়াক তরু
স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেপ) প্রকল্পের আওতায় ১৩ হাজার পাঁচজন নির্মাণকর্মীকে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দেবে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি (বিএসিআই)। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। এর মধ্যে তিন হাজার জনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণার্থীদের দেওয়া হবে মাসিক ভাতা, কোর্স শেষে মিলবে সনদ। চাকরির ব্যাপারে সহায়তাও করবে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে ছয়টি প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বাড়তে পারে। কোর্স শুরুর আগে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। যেসব প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষণ দিচ্ছে তারা নিজ উদ্যোগেও প্রশিক্ষণার্থী সংগ্রহের জন্য প্রচারণা চালায়।
কেন এই প্রশিক্ষণ
স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম প্রকল্পের বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি বিএসিআইয়ের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের চিফ কো-অর্ডিনেটর এবং বাংলাদেশ সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব প্রকৌশলী মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘দেশে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে যারা কাজ করে তাদের বেশির ভাগই স্কুল পর্যায়ে ঝরেপড়া, অল্পশিক্ষিত বা অশিক্ষিত শ্রেণির হয়ে থাকে। এদের কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ থাকে না। অন্যের কাজ দেখে দেখেই তারা শিখে। এখন দেশে অনেক ২০-৩০তলা উঁচু ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। তৈরি করা হচ্ছে ফ্লাইওভার, সেতু। এসব প্রকল্পে যে নির্মাণ শ্রমিকরা কাজ করে তাদের ভালো মানের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।’
প্রশিক্ষণের বিষয়
১১টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর মধ্যে সাতটি ট্রেড কোর্স এবং চারটি ম্যানেজমেন্ট পর্যায়ের কোর্স। ট্রেড কোর্স হলো—ম্যাশনারি, প্লাম্বিং, ইলেকট্রিক্যাল, রড বাইন্ডিং অ্যান্ড ফেব্রিকেশন, টাইলস অ্যান্ড মার্বেল ওয়ার্কস, পেইন্টিং ও অ্যালুমিনিয়াম ফেব্রিকেশন। প্রতিটি কোর্সের মেয়াদ তিন মাস। ম্যানেজমেন্ট পর্যায়ের কোর্সগুলো হলো—প্রজেক্ট প্রপোজাল প্রিপারেশন, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, কোয়ালিটি কন্ট্রোল এবং ক্যাড (টুডি ও থ্রিডি)। ক্যাড কোর্সে তিন মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ম্যানেজমেন্ট পর্যায়ের বাকি তিনটি কোর্সে প্রশিক্ষণের মেয়াদ দুই মাস। তিন মাসমেয়াদি কোর্সে ৩০০ ঘণ্টা এবং দুই মাসমেয়াদি কোর্সে দেওয়া হবে ৫০ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ।
আবেদনের যোগ্যতা
প্রকৌশলী মো. মুশফিকুর রহমান জানান, পুরুষ ও নারী উভয় প্রার্থীরাই আবেদন করতে পারবে। সব কোর্সেই নতুনদের পাশাপাশি এসব পেশায় নিয়োজিতরাও প্রশিক্ষণ নিতে পারবে। ট্রেড কোর্সে অংশ নেওয়ার জন্য পঞ্চম শ্রেণি পাস হতে হবে। যেহেতু তত্ত্বীয় ক্লাস আছে, তাই ন্যূনতম পড়াশোনা জানতে হবে। বয়স হতে হবে কমপক্ষে ১৫ বছর। ম্যানেজমেন্ট পর্যায়ের কোর্সগুলোতে অংশ নেওয়ার জন্য থাকতে হবে স্নাতক ডিগ্রি।
আবেদনের নিয়ম ও বাছাই প্রক্রিয়া
যেসব কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে সেখান থেকে সরাসরি আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে পারবেন আগ্রহীরা। অনলাইনে সেপ প্রকল্পের ওয়েবসাইট (ংবরঢ়-ভফ.মড়া.নফ) থেকেও আবেদন ফরম সংগ্রহ করা যাবে। যে কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিতে ইচ্ছুক সেখানে জমা দিতে হবে পূরণকৃত আবেদন ফরম। প্রতি ব্যাচে ৩০ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন। আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি হলে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। লিখিত পরীক্ষায় সংশ্লিষ্ট ট্রেড সম্পর্কে মৌলিক প্রশ্ন থাকতে পারে। মৌখিক পরীক্ষায় প্রার্থীর কাজের প্রতি আগ্রহ, প্রশিক্ষণ নিলে সে এ পেশায় আসবে কি না, এ ধরনের প্রশিক্ষণ কেন নিতে চায়, প্রশিক্ষণ নিলে কিভাবে লাভবান হবে এসব বিষয় যাচাই করা হয়। নির্মাণশিল্পে কাজ করতে হলে প্রার্থীকে অবশ্যই শারীরিকভাবে উপযুক্ত ও কর্মক্ষম হতে হবে। মৌখিক পরীক্ষায় প্রার্থীর শারীরিক ফিটনেসও দেখা হয়। স্কুল বা কলেজে পড়াশোনা করছে কিংবা যারা এ পেশায় আসতে আগ্রহী না এমন প্রার্থীদের প্রশিক্ষণ নিতে অনুৎসাহিত করা হয়। যোগ্য প্রার্থীরা এক ব্যাচে সুযোগ না পেলে পরের কোর্সে তাদের সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
প্রশিক্ষণ পদ্ধতি
প্রশিক্ষণ কোর্সকে দুভাগে ভাগ করা হয়—তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক। কোর্সের মোট সময়ের মধ্যে তত্ত্বীয় অংশে ২০ শতাংশ এবং ব্যবহারিক অংশে ৮০ শতাংশ বরাদ্দ থাকে। হাতে-কলমে শেখার ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীদের তৈরি কোর্স কারিকুলাম অনুযায়ী। ক্লাস নেন বিএসসি ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা। ব্যবহারিক ক্লাস নেন দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিরাও। প্রশিক্ষণার্থীরা কেমন কাজ শিখছে তা তদারকি করেন বিভিন্ন কনস্ট্রাকশন প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজাররা।
মিলবে ভাতা ও চাকরি
কোর্স শেষে প্রশিক্ষণার্থীদের মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া হয়। উত্তীর্ণদের দেওয়া হয় সনদপত্র। কোর্সে অংশ নেওয়ার জন্য কোনো ফি লাগবে না। উপরন্তু প্রতি মাসে ভাতা হিসেবে দেওয়া হয় তিন হাজার ১২০ টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের কোর্সে একজন প্রশিক্ষণার্থী ৯ হাজার ৩৬০ টাকা পাবে। দূর থেকে আসা প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে কয়েকটি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে। সে ক্ষেত্রে তাদের থাকা-খাওয়ার বদলে মাসিক ভাতা কেটে নেওয়া হয়। প্রকল্পের নিয়মানুযায়ী ৭০ শতাংশ প্রশিক্ষণার্থীর চাকরির ব্যবস্থা করার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি বিএসিআইয়ের সদস্য প্রতিষ্ঠান এবং প্রশিক্ষণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রার্থীদের চাকরির ব্যবস্থা করে থাকে।
বিদেশ যাওয়ার সুযোগ
প্রকৌশলী মো. মুশফিকুর রহমান জানান, নির্মাণশিল্পে শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও প্রচুর কাজের সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন দেশে নির্মাণ শ্রমিক পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু প্রশিক্ষণ না থাকায় অন্য দেশের প্রশিক্ষিত কর্মীদের সমান কাজ করেও তারা কম বেতন পায়। প্রশিক্ষিত নির্মাণ শ্রমিকদের বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে প্রশিক্ষণদাতা প্রতিষ্ঠান সাভারের আল ইসলাম টেকনিক্যাল অ্যান্ড এডুকেশনাল ইনস্টিটিউট। মধ্যপ্রাচ্যের দেশে কাতারে এসব প্রশিক্ষিত নির্মাণ শ্রমিক পাঠাতে সহযোগিতা করবে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ঠিকানা
♦ মিরপুর এগ্রিকালচারাল ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং স্কুল
১/সি-১/এ, পল্লবী, মিরপুর-১২, ঢাকা-১২১৬।
ফোন : ৯০০২৫৪৪, ৯০০২৪৯৩
ইমেইল : mr.atiar@yahoo.com
♦ মনটেজ ট্রেনিং অ্যান্ড সার্টিফিকেশন
১৪২, ১৪৩ মিরাশপাড়া, বিসিক শিল্পনগরী, টঙ্গী, গাজীপুর। ফোন : ৯৮১৬৩৫১, ৯৮১৬৩৫২, ০১৯১৪৮৬১০৪৬
ইমেইল : montagebd@yahoo.com
♦ ইউসেপ
প্লট নম্বর ২-৩, মিরপুর ২, ঢাকা।
ফোন : ৯০৩১০১৪
ইমেইল : ucep@ucepbd.org
♦ আল ইসলাম টেকনিক্যাল অ্যান্ড
এডুকেশনাল ইনস্টিটিউট
আনারকলি, অকপাড়া, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা।
ফোন : ০১৭২০০২৫২৯৯
ইমেইল : al-islam@aitlbd.net
♦ বাংলাদেশ টেকনিক্যাল ট্রেনিং অ্যান্ড
ডেভেলপমেন্ট সেন্টার
নিলয়-৩, চৌহাট্টা, সিলেট। ফোন : ০১৭১১৯৭৯২০৮
ইমেইল : bttdc.baci.sylhet@gmail.com
♦ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট
৬৯২/বি বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭।
ফোন : ০১৯১৪৯২৫২৬৯
ইমেইল : sdibaci@gmail.com
#kalerkanta
No comments:
Post a Comment